সবুজ পৃথিবী

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৬)

সামিয়া ইতি
অনেকক্ষণ ধরে চারদিকে নানা রকম বিচিত্র শব্দ হচ্ছে কটকটে শব্দ, ক্যাক্যা শব্দ, কিচিরমিচির শব্দ, মচমচ শব্দ, এসবের মাঝে সবচেয়ে বিচিত্র শব্দ যেটা হচ্ছে তা হল গরগর শব্দ, রু ধীরে ধীরে চোখ মেলে পরিপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে চারদিকে চোখ বোলায়, একটা চারপেয়ে জন্তু ওর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে, জিভ দিয়ে চাটছে পা, ঝট করে পা টেনে নেয় রু, তারপর দম ভরে নিঃশ্বাস নেয়, আহ! কি শান্তি!! এই সেই সবুজ শ্যামল পৃথিবী!! এই সেই সবুজ!!
চারদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহ আর কি কোমল বাতাস পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে রু কে, ও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই ব্যথায় অসাড় হয়ে আসে শরিল।
রু টাইম মেশিনে স্ক্রীনে ১৯৯৯ সেট করেছিলো, এবং সফল ভাবে চলেও এসেছে সেই সময়ের পৃথিবীতে।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই ও, ওহ কত বছরের স্বপ্ন আজ সফল হল, ওর কত স্বপ্ন ছিল পুরানো পৃথিবীতে আসার। বর্তমান পৃথিবী (৫০৭৫ সাল) শুধুই নাম মাত্র, পৃথিবী নামে কিছু একটা টিকে আছে শুধু। এখনকার পৃথিবীতে গাছ বলতে কিছু নেই ওগুলো ধংস হয়ে গেছে কবে! যা কিছু আছে সামান্য সেগুলো আর্টিফিশিয়াল। ইতিহাস পড়ে রু জেনেছে আগে পৃথিবীতে আলাদা আলাদা রাষ্ট্র ছিল এখন এসব কিছুই নেই সমস্ত পৃথিবী মিলেই এক আইন এক রাষ্ট্র, জনগোষ্ঠী কমে গেছে অনেক, আগে পৃথিবীর ৩ ভাগ জল ১ভাগ মাটি ছিল, এখন পৃথিবীতে মাটি বলতে কিছু নেই, মানুষ বসবাস করছে কৃত্রিম ভুমিতে, যার মূল্য অনেক অনেক বেশি তাইতো এই পৃথিবীতে শুধু তারাই বেঁচে আছে যাদের সম্পদ আকাশ ছোঁয়া আর বেঁচে আছে রু এর মত মানুষেরা যাদের বিজ্ঞানীরা ল্যাব থেকে সংরক্ষিত হরমোন নিয়ে টেস্টটিউবের মাধ্যমে তৈরি করে, এটা বিজ্ঞানীরা করে যখন পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অতিরিক্ত কমে যায়।
কিছুদিন আগে টাইম মেশিন বাজারে ছেড়েছে অতীত পৃথিবী নামের এক প্রতিষ্ঠান। রু সেই প্রতিষ্ঠানের একজন সাধারণ কর্মী। এত দাম একেকটা মেশিনের যা এই জনমে কেনার সাধ্য হবেনা, কিন্তু ওর বহু বহু দিনের স্বপ্ন অতীত পৃথিবী স্বচক্ষে দেখার, সবুজ গাছ দেখার, মানুষ দেখার, রু তো ঠিক করে রেখেছে একবার অতীতে যেতে পারলে এই খারাপ হৃদয়হীন পৃথিবীতে ও আর ফিরে আসবেনা।
অবশেষে আজ তার সেই স্বপ্ন সত্যি হল, আনন্দে রুর চোখ চক চক করছে, আহা এত সুন্দর! পৃথিবী এত সুন্দর ও হয়!!

জঙ্গল থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটতে থাকে রু। সব কিছু ভীষণ সুন্দর লাগছে, যা এতদিন আর্কাইভ ভিডিও ফাইল থেকে দেখেছে তা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছে আজ, প্রচণ্ড উত্তেজনার সাথে ভেতরে ভেতরে ভয় ভয় ও করছে।
হাঁটতে হাঁটতে বনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে রু, সামনে ছড়ানো ধান খেত পেরিয়ে একটা নিখুত পাতার বাড়ি দেখা যাচ্ছে। পাতা গুলো শুকিয়ে বাদামি রঙ ধারন করেছে, আহা এত সুন্দর!! এত সুন্দর!!! আনন্দ আর ভয়ের মিস্রনে কাঁপতে থাকে রু, বাড়ির ভেতর মানুষ আছে নিশ্চয়ই! তারা কেমন!! এরকম হাজার হাজার চিন্তা মাথায় খেলে যায় রুর; আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকে সেদিকে।
যেতে যেতে কেমন অস্বস্তিবোধ করে রু।
ধীরে ধীরে সব কেমন পরিবর্তিত হতে থাকে! ধান খেত পরিবর্তন হয়ে কংক্রিট হয়ে যায়, বাড়িটা ছোট হতে হতে মুছে যায় এক সময়, রু প্রানপন চেষ্টা করে সামনে এগিয়ে যেতে।
কিন্তু হায় সব চেষ্টা বিফলে, ওর পা গুলো ডেবে যেতে যেতে চারপাশ কেঁপে ওঠে ভীষণ ভাবে শেষে সব কেমন অন্ধকার হয়ে যায়।
জ্ঞান ফেরার পর রু দেখে সামনে অতীত পৃথিবীর মহা পরিচালক স্বয়ং দাঁড়িয়ে, একটু পাশেই ডি,জি,এম ও ম্যানেজার সহ বেশ কিছু চিকিৎসক কর্মী রোবট।
মহা পরিচালক কথা বলে ওঠে, তুমি টাইম মেশিন চুরি এবং ব্যবহার করে কোম্পানির ভীষণ ক্ষতি করেছো, আমরা তোমার ব্রেন স্ক্যান করে জেনেছি তুমি অতীত পৃথিবীতে থেকে যেতে চেয়েছিলে, আফসোসের সাথে তোমাকে জানাতে হচ্ছে আসলে অতীতে ফিরে যাওয়া হচ্ছে কেবল কয়েক মিনিটের অনুভুতি ছাড়া কিছুই নয়।
ওহ!! অস্ফুট হাহাকার বেরিয়ে আসে রুর গলা দিয়ে।
তারপর...
কত ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে কে জানে, রু চোখ মেললো দ্বিতীয় বারের মত, ওর পাশে অতীত পৃথিবীর দুটা রোবট কর্মী দাঁড়িয়ে, তৃষ্ণায় যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে রু ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে আমার কি হয়েছে?
তুমি অতীত পৃথিবী কোম্পানির আইন লঙ্ঘন করায় তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তোমাকে মৃত্যু ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে, এই ঘরের বিষাক্ত বাতাসে তুমি বড়জোর আর ৪ মিনিট বেঁচে থাকবে।
শরিলের ভেতর সব ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে নাক আর গলা দিয়ে যেন আগুন প্রবেশ করছে ভেতরে, রুর ওর মার কথা ভীষণ মনে পড়ছে যদিও ওর মা নেই, তবু কেন জানি মা নামে কিছু একটা ওর কল্পনায় আসে, শেষ বারের মত ঠোঁট নড়ে ওঠে রুর, মা, মাগো ভীষণ তৃষ্ণা পাচ্ছে; তুমি কোথায়, তুমি কি সবুজ পৃথিবীতে!।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর ওফ,সবুজের প্রতি আমাদের আগ্রহ, ‍সবুজকে বাচাবার আন্দোলন আর বিস্তীর্ণ সবুজে বেঁচে থাকার বাসনা,আপনার গল্পেই বুঝা যায় প্রকৃতি ধ্বংস করে আমরা কোন পৃথিবীর দিকে এগুচ্ছি,অনেক শুভেচ্ছা ভোট আর আমার গল্প ও কবিতা পাতায় আমন্ত্রন জানিয়ে গেলাম।
অনেক অনেক inspire হলাম আপনার কমেন্ট পড়ে। অনেক ধন্যবাদ ।
sakil গল্প ভাল হয়েছে, শরীল কি শরীর হবে? কাহীনিতে গভীরতা কম তবে থিম ভাল।
ধন্যবাদ শরীল ই তো হওয়ার কথা।
সমাধিরঞ্জন বিজ্ঞানের গভীরে না গিয়ে বেশ বোধগম্য লেখা। খুব ভালো খুব ভালো। দুটো slip of the computer শরিল ও প্রানপন ছাড়া বিশেষ ভুল ধর্তব্যের মধ্যে নয়।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
অনেক ধন্যবাদ... আমন্ত্রন গ্রহন করা হল।
দেবব্রত দত্ত ভাল লাগার নৌকাটা শেষ প্যারায় ডুবে গেছে।
কেন কেন শেষ পারায় ডুবল কেন? হাহা ভালো থাকবেন
আল মামুন খান ভাল লাগল। শুভেচ্ছা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আল মামুন

২০ জুন - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪